সঞ্চার ব্যবস্থা
1.ভিন্ন ভিন্ন কোন পদ্ধতিতে প্রেরক এন্টেনা থেকে গ্রাহক অ্যান্টেনার দিকে তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ প্রবাহিত হয় তা বিবৃত কর।
প্রেরক অ্যান্টেনা থেকে গ্রাহক এন্টেনার দিকে তরঙ্গ বিস্তার লাভের পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে সঞ্চারিত বেতার তরঙ্গ কে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয় ।
a) পৃষ্ঠতরঙ্গ বা ভূমি তরঙ্গ
b) দেশতরঙ্গ
c) আকাশ তরঙ্গ বা নভো তরঙ্গ
পৃষ্ঠতরঙ্গ বা ভূমি তরঙ্গ
i)পৃষ্ঠতরঙ্গ বা ভূমি তরঙ্গ কাকে বলে?
যে ধরনের বেতার তরঙ্গ ভূপৃষ্ঠের বক্রতাকে অনুসরণ করে বিস্তার লাভ করে তাকে পৃষ্ঠতরঙ্গ বা ভূমি তরঙ্গ বলা হয় ।এক্ষেত্রে ভূপৃষ্ঠ ও অয়নমন্ডল উভয়ই প্রতিফলক হিসেবে কাজ করে। এই দুই স্তরের মধ্যে বারবার প্রতিফলনের ফলে তরঙ্গ সামনের দিকে এগিয়ে যায় ।
ii)পৃষ্ঠ তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য গুলি লেখ।
1) ভূপৃষ্ঠ ও আয়ন মন্ডলের নিচে স্তরে বারবার প্রতিফলনের মধ্য দিয়ে এই তরঙ্গ বিস্তার লাভ করে। 2)ভূপৃষ্ঠে স্বল্প দূরত্বের পাল্লার মধ্যে সম্প্রচারিত হতে পারে।
3)VLF(30 KHz-300kHz)ও LF(300kHz-3MHz) কম্পাঙ্কের বাহক তরঙ্গের সঞ্চারের ক্ষেত্রে এই তরঙ্গ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
4)উচ্চ কম্পাঙ্কের বাহক তরঙ্গের ক্ষেত্রে তরঙ্গের শক্তি দ্রুত ভূমি দ্বারা শোষিত হয়। ফলে দীর্ঘ দূরত্বে যোগাযোগ সম্ভব হয় না ।
দেশ তরঙ্গ
1.দেশ তরঙ্গ কাকে বলে?
যে তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ প্রেরক অ্যান্টেনা থেকে সরলরেখায় গতিশীল হয়ে সরাসরি বা ভূপৃষ্ঠে প্রতিফলিত হয়ে গ্রাহক অ্যান্টেনায় পৌঁছায় সেই তরঙ্গ কে দেশ তরঙ্গ বলা হয়।
2.উপগ্রহ সঞ্চার বলতে কী বোঝো?
দেশ তরঙ্গ অতিদুর সঞ্চারের জন্য একের পর এক এন্টেনার ব্যবহারের পরিবর্তে পৃথিবীর চারিদিকে বিভিন্ন কক্ষপথে স্থাপিত কৃত্রিম উপগ্রহগুলিকে কাজে লাগানো হয় ।ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রেরিত দেশ তরঙ্গ কৃত্রিম উপগ্রহ দ্বারা প্রতিফলিত হয়ে ভূপৃষ্ঠের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে ।এই ব্যবস্থাকে কে উপগ্রহ সঞ্চার বা কৃত্রিম উপগ্রহ মারফত সঞ্চার বলা হয় ।
এই ব্যবস্থায় মুখ্যত উচ্চ কম্পাঙ্ক যুক্ত অনুতরঙ্গ (300MHz -300GHz)ব্যবহার করা হয়। এজন্য একে অনুতরঙ্গ (Micro wave Communication)সঞ্চার বলা হয়।
3.বেতার দিগন্ত কি ?
দেশ তরঙ্গ বায়ুমন্ডলের মধ্য দিয়ে সরলরৈখিক পথে প্রায় বিনা বিচ্যুতিতে বিস্তার লাভ করতে পারে ।ভূপৃষ্ঠের বক্রতার জন্য অ্যান্টেনার উপর নির্ভর করে ভূপৃষ্ঠে এই তরঙ্গ সঞ্চারের একটি নির্দিষ্ট সীমা থাকে ।এই সীমাকে ওই অ্যান্টেনার বেতার দিগন্ত বলা হয়।
4.বেতার দিগন্তের রাশি
মনে করি, পৃথিবীর ব্যাসার্ধ R ।পৃথিবীপৃষ্ঠের P বিন্দুতে PA = H উচ্চতার একটি অ্যান্টেনার সাহায্যে বেতার তরঙ্গ সম্প্রচার ঘটানো হচ্ছে । তরঙ্গ সর্বাধিক O বিন্দু পর্যন্ত যেতে পারে। PO হল অ্ন্টেনাটির বেতার দিগন্ত।



আকাশ তরঙ্গ
1.আকাশ তরঙ্গ বলতে কি বোঝ ?
মহাকাশ অভিমুখে প্রেরিত যে বেতার তরঙ্গকে আয়ন মন্ডলে প্রতিফলন ঘটিয়ে ভূপৃষ্ঠে অবস্থিত কোন স্থানে পাঠানো সম্ভব হয় তাকে আকাশ তরঙ্গ বা sky wave বলা হয় ।
2.আকাশ তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য
1) আকাশ তরঙ্গ হিসেবে মাঝারি কম্পাঙ্ক(MF) এবং উচ্চ কম্পাঙ্কের(HF) নিচের দিকের কম্পাঙ্ক সম্পন্ন বাহক তরঙ্গগুলি সাধারণত আকাশ তরঙ্গ হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
2) আকাশ তরঙ্গ বিস্তারে আয়ন মন্ডল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে আয়ন মন্ডল এর ঘনত্ব বৃদ্ধি পায় ।ফলে অয়নমন্ডলের প্রতিসরাঙ্ক
এর মান ক্রমশ কমতে থাকে।(N= ওই স্তরে ইলেক্ট্রনের সংখ্যা ঘনত্ব ,f= আকাশ তরঙ্গের কম্পাঙ্ক)
3.দিনের বেলার তুলনায় রাত্রিবেলা নভোতরঙ্গ প্রেরিত সংকেত স্পষ্ট ও তীব্র হয় কেন?
সৌর বিকিরণ বা মহাজাগতিক বিকিরণ আয়ন মন্ডল এর ওপর স্তরে এসে পড়ে ।ফলে আয়ন মন্ডল এর উপরের স্তরে আয়নীভবনের মাত্রা বেশি হয় ।এই মাত্রার তারতম্য অনুসারে আয়ন মন্ডলকে উচ্চস্তর ,মধ্যস্তর ও নিম্নস্তর এই তিনটি স্তরে ভাগ করা হয়। উচ্চ স্তরে আয়নীভবনের মাত্রা সর্বাধিক ।উচ্চ কম্পাঙ্কের নভোতরঙ্গ উচ্চ স্তরে প্রতিফলিত হয়ে ভূপৃষ্ঠে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে ।এক্ষেত্রে মধ্যস্তর ও নিম্ন স্তরে তরঙ্গ কিছু মাত্রায় শোষিত হয় ।দিনের বেলা এই তিনটি স্তরের অস্তিত্ব থাকলেও রাত্রিবেলা মধ্যস্তর ও নিম্নস্তর প্রায় অবলুপ্ত হয়ে যায় ।ফলে শোষণের পরিমাণ খুব কম হয়। তাই রাত্রিবেলা নভোতরঙ্গ বাহিত সংকেত স্পষ্ট ও তীব্র হয়।
0 Comments
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন