স্থিতিস্থাপকতা

বাহ্যিক বল প্রয়োগ করে কোন বস্তুর আকার বা আয়তন বা উভয়ের পরিবর্তনের চেষ্টা করলে যে ধর্মের জন্য বস্তুটি এই পরিবর্তনের প্রচেষ্টাকে বাধা দেয় এবং বাহ্যিক বল অপসারিত হলে বস্তুটি তার পূর্বের আকার আয়তন ফিরে পায় সেই ধর্মকে স্থিতিস্থাপকতা বলা হয়।

কয়েকটি জ্ঞাতব্য বিষয়

স্থিতিস্থাপকতার উপর বিভিন্ন বিষয়ের প্রভাব

1)কোন ধাতুকে বারবার বিকৃত করলে ধাতুর স্থিতিস্থাপকতা হ্রাস পায় ।এই ঘটনাকে স্থিতিস্থাপক অবসাদ বলা হয়।

২) কোন ধাতুর সাথে অন্য ধাতু মিশিয়ে সংকর ধাতু গঠন করা হলে স্থিতিস্থাপকতা ধর্মের পরিবর্তন ঘটে। 

3)ধাতুর উষ্ণতার পরিবর্তনে স্থিতিস্থাপকতা ধর্মের পরিবর্তন ঘটে।সাধারণভাবে উষ্ণতা বৃদ্ধিতে স্থিতিস্থাপকতার  হ্রাস পায় এবং উষ্ণতা হ্রাসে স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি পায় ।উষ্ণতার পরিবর্তনে ইনভারের স্থিতিস্থাপকতার পরিবর্তন হয় না।

✅ পীড়ণ,বিকৃতি, স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্ক :-

পীড়ণ বলতে কি বোঝ?

বাইরে থেকে প্রযুক্ত বল দ্বারা কোন বস্তুকে বিকৃত করা হলে স্থিতিস্থাপকতা ধর্মের জন্য বস্তুর ভিতর একটি প্রতিক্রিয়া বল বা প্রত্যয়নকারী বল এর উদ্ভব হয় যা বাহ্যিকবলকে প্রতিরোধ করে এবং বাহ্যিক বল অপসারিত হলে পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে ।বস্তুটির প্রস্থচ্ছেদের প্রতি একক ক্ষেত্রফলের উৎপন্ন প্রতিক্রিয়া বল কে পীড়ণ বলা হয়।

পীড়ণের একক ও মাত্রা

SI একক \(N.m ^{-2}\)

CGS একক \(dyn.cm^2\)

মাত্রা[\(ML^{-1}T^{-2}\)]

বিকৃতি কাকে বলে?

বাহ্যিক বলের প্রভাবে বস্তুর আকার বা আয়তনের পরিবর্তন ঘটলে বস্তুটি বিকৃত হয়েছে বলা হয় ।বস্তুটির একক মাত্রায় যে মাত্রার পরিবর্তন ঘটে তাকে বিকৃতি বলা হয় ।বিকৃতি দুটি সমজাতীয় রাশির অনুপাত। তাই বিকৃতির কোন একক নেই এবং এটি একটি মাত্রাহীন রাশি।

হুকের সূত্র

স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে পীড়ণ বিকৃতির সমানুপাতিক। পীড়ন \(\propto\) বিকৃতি

অনুদৈর্ঘ্য বিকৃতি ,অনুদৈর্ঘ্য পীড়ণ এবং ইয়ং গুণাঙ্ক।

i)অনুদৈর্ঘ্য বিকৃতি :-বস্তুর দৈর্ঘ্য বরাবর বাহ্যিক বল প্রযুক্ত হলে এর দৈর্ঘ্যের পরিবর্তন ঘটে ।বস্তুটির একক দৈর্ঘ্যে যে দৈর্ঘ্যর পরিবর্তন ঘটে তাকে অনুদৈর্ঘ্য বিকৃতি বলা হয়।

বাহ্যিক বলের প্রভাবে Lদৈর্ঘ্য বিশিষ্ট দন্ডের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি lহলে অনুদৈর্ঘ্য বিকৃতি\(\frac{l}{L}\)

অনুদৈর্ঘ্য বিকৃতি একক ও মাত্রাহীন রাশি।

ii)অনুদৈর্ঘ্য পীড়ণ:- কোন বস্তুর দৈর্ঘ্য বরাবর কোন বলপ্রযুক্ত হলে বস্তুটির প্রস্থচ্ছেদের প্রতি একক ক্ষেত্রফলে যে প্রতিক্রিয়া বল উৎপন্ন হয় তাকে অনুদৈর্ঘ্য পীড়ণ বলা হয় ।ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া সমান ।তাই প্রতি একক প্রস্থচ্ছেদে প্রযুক্ত বলের দ্বারাই পীড়ণের পরিমাপ করা হয়।

তারের প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল A এবং উৎপন্ন বল F হলে পীড়ণ \(=\frac{F}{A}\)

পীড়ণের একক ও মাত্রা

SI একক \(N.m ^{-2}\)

CGS একক \(dyn.cm^2\)

মাত্রা[\(ML^{-1}T^{-2}\)]

iii)ইয়ং গুণাঙ্ক

স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে অনুদৈর্ঘ্য পীড়ণ ও অনুদৈর্ঘ্য বিকৃতির অনুপাতকে ইয়ং গুণাঙ্ক বলা হয়।

ইয়ং গুণাঙ্ক সমান \(\frac{পীড়ণ}{বিকৃতি}\)

L দৈর্ঘ্য এবং Aপ্রস্থচ্ছেদ বিশিষ্ট একটি দন্ডের এক প্রান্ত দৃঢ় অবলম্বনে আটকে অপরপ্রান্তে F বল প্রয়োগ করলে যদি দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি l হয় তবে ইয়ং গুণাঙ্ক \(Y =\frac{\frac{F}{A}}{\frac{l}{L}}\) \(Y =\frac{FL}{Al}\) \(Y =\frac{MgL}{\pi{r^2}l}\)

[\(A=\pi{r^2}\),Mg= F]

iv)ইস্পাতের ইয়ং গুণাঙ্ক\(1.2×10^{-12}dyn/cm^2\)বলতে কী বোঝো ?

একটি ইস্পাত তারে একক অনুদৈর্ঘ্য বিকৃতি উৎপন্ন করতে তারের প্রস্থচ্ছেদের প্রতি বর্গসেমিতে\( 1.2×10^{-12}\)dyn বল প্রয়োগ করতে হবে ।

আয়তন বিকৃতি ,আয়তন পীড়ণ, আয়তন বিকৃতি গুণাঙ্ক

আয়তন বিকৃতি :-

বাহ্যিক বলের প্রভাবে যদি বস্তুর আকৃতির পরিবর্তন না হয়ে কেবলমাত্র আয়তনের পরিবর্তন হয় তবে বস্তুর একক আয়তনে আয়তনের যে পরিবর্তন ঘটে তাকে আয়তনে বিকৃতি বলা হয়।

বাহ্যিক বল প্রয়োগের ফলে একটি বস্তুর V আয়তনে আয়তন পরিবর্তন v হলে আয়তন বিকৃতি \(=\frac{v}{V}\)

>🔹আয়তন বিকৃতি একক ও মাত্রাহীন রাশি ।

আয়তন পীড়ণ:-বাইরে থেকে প্রযুক্ত বল দ্বারা আকৃতির পরিবর্তন না ঘটিয়ে বস্তুর আয়তন পরিবর্তন ঘটানো হলে একটি বিরুদ্ধে বল উৎপন্ন হয় যেটি বাহ্যিক বল অপসারিত হলে পূর্বের আয়তনে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করে। বস্তুর প্রতি একক ক্ষেত্রফলে উৎপন্ন এই বল কে আয়তন পীড়ণ বলা হয়।;

আয়তন বিকৃতির ক্ষেত্রে বস্তুতে উদ্ভূত পীড়ণকে আয়তন পীড়ণ বলা হয়।

বস্তুতে উৎপন্ন বল F এবং ক্ষেত্রফল A হলে আয়তন পীড়ণ \(\frac{F}{A}\)

আয়তন বিকৃতি গুণাঙ্ক :-স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে আয়তন পীড়ণ ও আয়তন বিকৃতির অনুপাতকে আয়তন বিকৃতি গুণাঙ্ক বলা হয়।

আয়তন বিকৃতি গুণাঙ্ক \(K=\frac{\frac{F}{A}}{\frac{v}{V}}\)

\(K=\frac{P}{\frac{v}{V}}\)[\(p=\frac{F}{A}\)]

আয়তন বিকৃতি গুণাঙ্ক এর একক ও মাত্রা

SI একক \(N.m ^{-2}\)

CGS একক \(dyn.cm^2\)

মাত্রা[\(ML^{-1}T^{-2}\)]

সংনম্যতা কৃন্তন বিকৃতি ,কৃন্তন পীড়নও দৃঢ়তা গুণাঙ্ক

✅পয়সন অনুপাত

পয়সন অনুপাত কাকে বলে?

স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে পার্শ্বীয় বিকৃতি ও অনুদৈর্ঘ্য বিকৃতি এর আনুপাতকে পয়সন আনুপাত বলা হয় Lদৈর্ঘ্য ও D ব্যাস বিশিষ্ট একটি তারে বল প্রয়োগ করার ফলে দৈর্ঘ্য l বৃদ্ধি এবং ব্যাস হ্রাস d হলে

পার্শ্বীয় বিকৃতি\(\frac{d}{D}\)

অনুদৈর্ঘ্য বিকৃতি\(\frac{l}{L}\)

পয়সন \(\sigma=\frac{\frac{d}{D}}{\frac{l}{L}}\)অনুপাত

একক ও মাত্রা

পয়সন অনুপাত দুই প্রকার বিকৃতির আনুপাত তাই এটি একক ও মাত্রাহীন রাশি ।

পয়সন অনুপাত।কয়েকটি প্রশ্ন ও উত্তরঃ

পয়সন অনুপাত একটি স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্ক কিনা আলোচনা কর।

উঃ-পয়সন অনুপাত স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্ক নয় ।স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্ক গুলি পীড়ন ও বিকৃতির আনুপাত ।কিন্তু পয়সন অনুপাত কেবলমাত্র দুই প্রকার বিকৃতির আনুপাত;এর একক বা মাত্রা নেই।এটি একটি সাংখ্যা মাত্র। তাই পয়সন অনুপাত স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্ক নয় ।

পয়সন অনুপাতের তাত্ত্বিক মান কিরূপ হয়?

উঃ-পয়সন অনুপাতের তাত্ত্বিক মান 0 থেকে\(+\frac{1}{2}\) এর মধ্যে হয় ।

পয়সন অনুপাতের বাস্তব মান কিরূপ হয়?

উঃ-পয়সন অনুপাতের বাস্তব মান -1 থেকে\(+\frac{1}{2}\) এর মধ্যে হয় ।

পয়সন অনুপাতের বাস্তব মান ঋণাত্মক(-1 থেকে 0 এর মধ্যে) হয় না কেন?

উঃ- পয়সন অনুপাতের হিসাবে দৈর্ঘ্য বৃদ্ধিকে ধনাত্মক এবং ব্যাসের হ্রাসকে ধনাত্মক ধরা হয়।বস্তুর অনুদৈর্ঘ্য প্রসারনের ফলে পার্শ্বীয় প্রাসারন ঘটলে তবেই পয়সন অনুপাতের মান ঋনাত্মক হওয়া সম্ভব। বাস্তবে এরুপ পদার্থের কোন আস্তিত্ব নেই। তাই পয়সন অনুপাতের বাস্তব মান ঋনাত্মক হয় না।

🔹 ১. স্থিতিস্থাপক তারে টান দেওয়ার কৃতকার্য (Work Done)

যখন কোনো তার বা তারের মতো বস্তু তার স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে প্রসারিত করা হয়, তখন একটি বল প্রয়োগ করতে হয়। এই বলের বিরুদ্ধে কাজ করতে হয় এবং সেটিই স্থিতিস্থাপক স্থিতিশক্তি হিসেবে সঞ্চিত থাকে।

যদি,
  • মূল দৈর্ঘ্য = \( L \)
  • প্রসারণ = \( l \)
  • প্রযুক্ত বল = \( F \)
  • তবে গড় বল = \( \frac{F}{2} \)
কৃতকার্য = গড় বল × প্রসারণ =
\( W = \frac{1}{2} F \cdot l \)

হুকের সূত্র অনুযায়ী,

\( F = Y \cdot \frac{A}{L} \cdot l \)

তাহলে,

\( W = \frac{1}{2} Y \cdot \frac{A}{L} \cdot l^2 \)

🔹 ২.স্থিতিস্থাপক স্থিতিশক্তি (Elastic Potential Energy)

উপরোক্ত কৃতকার্য বস্তুতে স্থিতিস্থাপক স্থিতিশক্তি হিসেবে সঞ্চিত থাকে।:

\( U = \frac{1}{2} Y \cdot \frac{A}{L} \cdot l^2 \)

🔹 ৩. শক্তি ঘনত্ব (Energy Density)

শক্তি ঘনত্ব হল একক আয়তনে সঞ্চিত স্থিতিস্থাপক স্থিতিশক্তি।

শক্তি ঘনত্ব = \( \frac{U}{A \cdot L} = \frac{1}{2} Y \cdot \frac{l^2}{L^2} \)

যেহেতু বিকৃতি = \( \frac{l}{L} \), তাই:

শক্তি ঘনত্ব = \( \frac{1}{2} Y \cdot (\text{বিকৃতি})^2 \)

🔹 ৪. পীড়ণ এবং বিকৃতির সাথে শক্তি ঘনত্বের সম্পর্ক

হুকের সূত্র অনুযায়ী,\( \frac{1}{2}\)পীড়ণ\(\times\)বিকৃতি

পীড়ণ = \( Y\times\)বিকৃতি

তাহলে, শক্তি ঘনত্ব =

\( \frac{1}{2}\)পীড়ণ\(\times\)বিকৃতি

📋 সারাংশ টেবিল

পরিমাণ সূত্র
কৃতকার্য (Work Done) \( \frac{1}{2} F \cdot l \)
স্থিতিস্থাপক স্থিতিশক্তি \( \frac{1}{2} Y \cdot \frac{A}{L} \cdot l^2 \)
শক্তি ঘনত্ব \( \frac{1}{2} \times{Y}\)\(\times\)বিকৃতি\({}^2 \)
পীড়ণ বিকৃতির মাধ্যমে শক্তি ঘনত্ব \( \frac{1}{2}\)পীড়ণ\(\times\)বিকৃতি

উপসংহার: উপরের সম্পর্কগুলো পরীক্ষায় প্রমাণ ও ব্যাখ্যার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে প্রসারিত বস্তুতে এই শক্তি সঞ্চিত হয়।