পারমানবিক নিউক্লিয়াস
১)ভর ও শক্তির তুল্যতা বলতে কি বোঝ?
তাৎপর্য উল্লেখ করে এই তুল্যতা সম্পর্কিত সমীকরণটি বিবৃত ও ব্যাখ্যা করো।
ভর ও শক্তির তুল্যতার নীতিটি বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদ তত্ব থেকে পাওয়া যায়। বিজ্ঞানীর মতে শক্তির অপর একটি রূপ হল ভর। পদার্থের ভরকে শক্তিতে বা শক্তিকে পদার্থের ভরে রূপান্তরিত করা সম্ভব । ভর ও শক্তির এই সমতাজ্ঞাপক সম্পর্ককে ভর ও শক্তির তুল্যতা বলা হয়।
ভর ও শক্তির তুল্যতা সম্পর্কিত সমীকরণ
কোনো পদার্থের m ভর যদি সম্পূর্ণ রূপে শক্তিতে পরিণত হয় তবে উৎপন্ন শক্তির পরিমান E=mc2
[C =শূন্য মাধ্যমে আলোর বেগ]
এই সমীকরণ নির্দেশ করে যে, বস্তুতে শক্তি সরবরাহ করা হলে ভর বৃদ্ধি পায় এবং শক্তি নির্গত করলে ভর হ্রাস পায়।
2)1g ভরের তুল্য শক্তি নির্নয় করো।
আমরা জানি E=mc2
=1x(3x1010)2
erg. [C-3x1010cm/s]
=9x1020 erg
=9x1013 J


পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ভর নিউক্লিয়াসে অবস্থিত নিউক্লিয়ন গুলির (প্রোটন ও নিউট্রন) মুক্ত অবস্থায় মোট ভরের তুলনায় কিছুটা কম হয়।ভরের এই পরিমাণগত হ্রাসকে ভর ত্রুটি বা ভর ঘাটতি বলা হয়।
ধরা যাক, নিউক্লিয়াসে উপস্থিত প্রোটন ও নিউটনের ভর যথাক্রমে mpও mn কোনো নিউক্লিয়াসের ভর সংখ্যা A ও পারমানবিক ক্রমাঙ্ক Z হলে নিউট্রন সংখ্যা =(A -Z )।নিউক্লিয়ন গুলির মোট ভর=Zmp +(A-Z)mn
নিউক্লিয়াসের স্থির ভর M হলে ভর ত্রুটি = নিউক্লিয়ন গুলির মোট ভর - নিউক্লিয়াসের স্থির ভর
=[Zmp +(A-Z)mn ]-M
5.নিউক্লিয়াসের বন্ধন শক্তি
নিউক্লিয়াসের মধ্যে প্রোটন ও নিউট্রন গুলি দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকে। তাই নিউক্লিয়াস থেকে নিউক্লিয়নগুলিকে বিচ্ছিন্ন করে মুক্ত অবস্থায় আনতে কিছু পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন হয় ।একে নিউক্লিয়াসের বন্ধন শক্তি বলা হয় ।
মুক্ত অবস্থায় নিউক্লিয়ন গুলির মোট ভর অপেক্ষা নিউক্লিয়াসের ভর সামান্য কম হয় ।ভরের এই পার্থক্যই নিউক্লিয়াসের বন্ধন শক্তির উৎস ।মুক্ত অবস্থা থেকে নিউক্লিয়ন গুলি একত্রিত হয়ে নিউক্লিয়াস গঠন করলে যে পরিমাণ শক্তি নির্গত হয় তা বন্ধন শক্তির সমান হয় ।
অতএব নিউক্লিয়াসের বন্ধন শক্তি E =[Zmp +(A-Z)mn -M]c2
যেখানে ,প্রোটনের ভর =mp নিউট্রনের ভর =mn নিউক্লিয়াসের ভর= M
ভর গুলি যদি Kg এককে থাকে তাহলে C কে m/s এককে বসিয়ে বন্ধন শক্তি এর মান জুল (J ) এককে পাওয়া যাবে।
6.নিউক্লিয়ন প্রতি বন্ধনশক্তি(E) বনাম ভরসংখ্যা (A) লেখচিত্র
নিউক্লিয়াসের মোট বন্ধন শক্তিকে নিউক্লিয়ন সংখ্যা দিয়ে ভাগ করে নিউক্লিয়ন প্রতি বন্ধন শক্তি পাওয়া যায় । এর মান যত বেশি হয় নিউক্লিয়াসও ততো বেশি স্থায়ী হয়। চিত্রে নিউক্লিয়ন প্রতি বন্ধন শক্তি (E) বনাম ভরসংখ্যা (A) লেখচিত্র দেখানো হল।

চিত্র থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, মাঝারি ভরের নিউক্লিয়াস গুলি হালকা বা ভারী নিউক্লিয়াস গুলির তুলনায় বেশি স্থায়ী হয়।প্রতিটি নিউক্লিয়নের গড় বন্ধন শক্তি 8MeV এর কাছাকাছি হলে নিউক্লিয়াসের স্থায়িত্ব বাড়ে।
7.তেজস্ক্রিয় বিঘটন বা তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ের সরন সূত্র
তেজস্ক্রিয় পদার্থের পরমাণু নিউক্লিয়াস থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রশ্মি নির্গত হয় এবং এর ফলে মূল বা জনক পরমাণু পরিবর্তিত হয়ে অন্য মৌলের পরমাণুতে পরিণত হয় । বিজ্ঞানী সডি ও ফাজানস তেজস্ক্রিয় মৌলের এই পরিবর্তনকে কয়েকটি সূত্রের আকারে প্রকাশ করেন। এটি সডি -ফাজানস( Soddy-Fajans') এর সরণ সূত্র নামে পরিচিত ।
i)আলফা বিঘটনের সূত্র: -
যখন কোন তেজস্ক্রিয় পরমাণু একটি আলফা কণা নিঃসরণ করে তখন তার ভর সংখ্যা চার একক কমে যায় এবং পারমাণবিক সংখ্যা দুই একক কমে যায়।
ফলে পর্যায় সারণিতে দুহিতা পরমাণুর অবস্থান মূল পরমাণুর অবস্থান থেকে দু ঘর বাম দিকে সরে যায়।
ii) বিটা বিঘাটনের সূত্র :-
যখন কোন তেজস্ক্রিয় পরমাণু একটি বিটা কণা নিঃসরণ করে তখন তার ভরসংখ্যা অপরিবর্তিত থাকে কিন্তু পারমাণবিক সংখ্যা এক একক বৃদ্ধি পায়।
ফলে পর্যায় সারণিতে দুহিতা পরমাণুর অবস্থান মূল পরমাণুর অবস্থান থেকে এক ঘর ডান দিকে সরে যায় ।
iii)গামা বিঘাটনের সূত্র :-
কোন তেজস্ক্রিয় পরমাণু থেকে গামারশ্মি নির্গমনের ফলে এর ভর সংখ্যা ও পারমানবিক সংখ্যার কোনো পরিবর্তন হয় না।
8.তেজস্ক্রিয় বিঘটন বা ক্ষয়ের সূচকীয় সূত্র
বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় পদার্থের বিঘটন পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে বিঘটনের হার একটি নির্দিষ্ট গাণিতিক নিয়ম মেনে চলে । কোন মুহূর্তে তেজস্ক্রিয় পরমাণুগুলির বিঘটনের হার ওই মুহূর্তে উপস্থিত অক্ষত পরমাণুর সংখ্যার সমানুপাতিক। একে তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ের সূত্র বলা হয়।
ধরা যাক , কোন তেজস্ক্রিয় পদার্থের t=0 সময়ে অক্ষত পরমাণুর সংখ্যা N০ ।t মুহূর্তে অক্ষত পরমাণুর সংখ্যাN.। dt ক্ষুদ্র সময়ের অবকাশে dN সংখ্যাক পরমাণু বিঘটিত হলে এই মুহূর্তে বিঘটনের হার dN/dt এবং এটি N এর সমানুপাতিক হবে।


এটি তেজষ্ক্রিয় বিঘটনের সূচকীয় সূত্র।
9.অর্ধায়ু
কোনো তেজষ্ক্রিয় নমুনায় উপস্থিত পরমাণুর সংখ্যা যে সময় পরে প্রারম্ভিক সংখ্যার অর্ধেক হয় সেই সময়কে ওই তেজষ্ক্রিয় মৌলের অর্ধায়ু বলা হয়।
অর্ধায়ু ও ক্ষয় ধ্রুবকের মধ্যে সম্পর্ক :-
ধরা যাক , প্রাথমিক অবস্থায় কোন তেজস্ক্রিয় নমুনায় তেজস্ক্রিয় পরমাণুর সংখ্যা N০ । t সময় পরে ওই সংখ্যা N হলে তেজস্ক্রিয় বিঘটনের সূচকীয় সূত্র অনুযায়ী ,

যেখানে হল ক্ষয় ধ্রুবক।
এখন তেজস্ক্রিয় মৌলটির অর্ধায়ু T হলে ,T সময় পরে নমুনায় তেজস্ক্রিয় পরমাণুর সংখ্যা

10)কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তা ব্যাখ্যা কর এবংএর বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ.
উচ্চ শক্তি সম্পন্ন নিউট্রন ,প্রোটন ,আলফা কণা ইত্যাদি দ্বারা আঘাত করে অপেক্ষাকৃত হালকা মৌলদের মধ্যেও কৃত্রিম উপায়ে তেজস্ক্রিয়তা ধর্মের উদ্ভব ঘটানো যায়। এই ঘটনাকে কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তা বলা হয় ।বিজ্ঞানী আইরিন কুরি জোলীও ও তার স্বামী ফ্রেডরিক জোলীও এই ঘটনা আবিষ্কার করেন।
জোলীও দম্পতি লক্ষ্য করেন যে অ্যালুমিনিয়াম এবং বোরনকে দ্রুতগামী আলফা কনা দ্বারা আঘাত করলে নিউট্রন ও পজেট্রন নিসৃঃত হয় এবং আলফা কণা বর্ষণ বন্ধ হওয়ার পরও পজিট্রন নিঃসরণ বন্ধ হয় না। এই অ্যালুমিনিয়ামের সক্রিয়তা প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয় মৌলের মত একই ভাবে সময়ের সঙ্গে হ্রাস পায়। ঘটনাটির ব্যাখ্যা হিসেবে বলা হয় অ্যালুমিনিয়ামকে আলফা কণা দ্বারা আঘাত করলে তেজস্ক্রিয় ফসফরাস উৎপন্ন হয় ,যা পজিট্রন নিঃসরণ করে সুস্থিত সিলিকনে পরিণত হয়।

আলফা কণা ছাড়াও প্রোটন ,নিউট্রন কণাকে প্রক্ষেপক হিসেবে ব্যবহার করে প্রচুর সংখ্যক কৃত্রিম তেজস্ক্রিয় সংস্থানিক গঠন করা সম্ভব হয়েছে। আচরণ ও সক্রিয়তার দিক থেকে এরা স্বাভাবিক তেজস্ক্রিয় সংস্থানিকের অনুরূপ হয়ে থাকে।
কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তার বৈশিষ্ট্য:-
1)কৃত্রিম পদ্ধতিতে উৎপন্ন হলেও কৃত্রিম তেজস্ক্রিয় সমস্থানিকগুলি স্বাভাবিক তেজস্ক্রিয় মৌল গুলির মতই সূচকীয় নিয়ম মেনে বিঘতিত হয়।
2) স্বাভাবিক তেজস্ক্রিয় মৌলের মতো শুধু ভারী না হয়ে তেজস্ক্রিয় সমস্থানিকগুলি হালকা ও ভারি দুই হয়ে থাকে।
3) কৃত্রিম পদ্ধতিতে সৃষ্ট অস্থায়ী তেজস্ক্রিয় সমস্থানিকগুলি প্রকৃতিতে স্থায়ী অবস্থাতেও পাওয়া সম্ভব। 4)কৃত্রিম তেজস্ক্রিয় সমস্থানিকগুলি আল্ফ়া,বিটা,গামা ,পজিট্রন নির্গমন ঘটায়। এর মধ্যে পজিট্রন নিঃসরণ নিজস্ব ধৰ্ম।
11.নিউক্লিয় সংযোজন বিক্রিয়া ঘটানোর জন্য হাইড্রোজেনের মতো হালকা মৌল নেওয়া সুবিধা জনক কেন?
হালকা মৌলের ক্ষেত্রে নিউক্লিয়াসের আধান কম ।ফলে নিউক্লিয়াস গুলির মধ্যে কুলম্বীয় বিকর্ষণ বল কম হয় এবং অপেক্ষাকৃত কম উষ্ণতায় নিউক্লিয় সংযোজন ঘটে, তাই নিউক্লিয় সংযোজন ঘাটাতে হাইড্রোজেনের মতো হালকা মৌল নেওয়া সুবিধা জনক হয়।
12.সান্নিধ্যের নিকটবর্তী দূরত্ব বলতে কী বোঝ ?5.5 MeVএর গতিশক্তি বিশিষ্ট একটি আল্ফ়া কণাকে নিউক্লিয়াসের (Z =79) দিকে নিঃক্ষেপ করা হলো।সান্নিধ্যের নিকটবর্তী দূরত্ব গণনা করো।
একটি আহিত কণাকে কোনো নিউক্লিয়াসের দিকে নিক্ষেপ করা হলে অহিতকণা ও নিউক্লিয়াসের মধ্যে যে সর্বনিম্ন দূরত্ব পাওয়া যায় বা অহিতকণা ও নিউক্লিয়াসের মধ্যে যে দূরত্বের জন্য কণাটির প্রারম্ভিক গতিশক্তি সম্পূর্ণরূপে তড়িৎ স্থিতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয় সেই দূরত্বকে সান্নিধ্যের নিকটবর্তী দূরত্ব বলা হয়।
আল্ফ়া কন্যার প্রাথমিক গতিশক্তিEk =5.5 MeV=5.5x108x1.6X10-19J
নিউক্লিয়াসের আধান 79e আলফা কণার আধান 2e [e=1.6X10-19C]
ন্যূনতম দূরত্বের ক্ষেত্রে স্থিতি স্থিতিশক্তি
ন্যূনতম দূরত্বের ক্ষেত্রে ,Ep = Ek
নিম্নলিখিত বিষয় জানতে ক্লিক করুন
0 Comments
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন